
একজন সুবিবেচক এবং সুস্থির মানুষ যখন একটা বই পড়ার জন্য হাতে নেন তখন তার চিন্তা করা উচিত,
যে তিনি কেন বই পড়ছেন- নিছক সময় কাটানোর জন্য নাকি বিনোদন পাবার জন্য কিংবা অন্য কোনো গূঢ় কারণ আছে যা মানব জীবনের জন্য কল্যাণকর।
মানবজীবন খুব- ই সংক্ষিপ্ত ৷ কখন মানুষের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে বেলা ফুরিয়ে আসবে
তা আমরা কেউ ই জানতে পারিনা।
আজ আছি, একটু পর নাও থাকতে পারি, হায়াত-মওত এর নিয়ন্ত্রণ স্রষ্টার হাতে।
জ্ঞানী ব্যক্তি কথা-কাজ-কর্মে জ্ঞান অর্জনের পন্থা তৈরি করে নেন এটা জেনেই যে মৃত্যু বা ধ্বংস অবধারিত। তবুও জ্ঞান অর্জনে থেমে যেতে বলা হয়নি৷ দূর -দূরান্তে ছড়িয়ে পড়তে বলা হয়েছে জ্ঞানের এবং জ্ঞানীর
পরশের সন্ধানে। সকল ধর্ম ই সবাইকে জ্ঞান অর্জনের তাগিদ দেয়।
কিন্তু পৃথিবীর এত এত জ্ঞান, এত এত তথ্য, এত সমীক্ষা, এত গবেষণা সব বিষয়ের
নাগাল পাওয়া এই ছোট্ট জীবনে আদৌ সম্ভবপর না৷
অতএব পৃথিবীর সব বই পড়া এবং সাথে অন্যান্য পড়ালেখা ও দৈনন্দিন কাজ ঠিকভাবে করা
কখনো একই সাথে ঘটতে পারেনা। এর জন্য দরকার নিজের গন্ডিটা বাছাই করা,
নিজের বাধ্যতামূলক পড়াশোনার পাশাপাশি কোন বিষয়ের চর্চা একজনের জীবনের জন্য
উপযোগী সেটা বেছে নেওয়াটা খুব জরুরি৷
আরো পড়ুন: ওয়েব সার্ভার কিভাবে কাজ করে?
একজন মানুষকে নির্দিষ্ট করা উচিত তিনি কোন ধরণের বার্তা একটা বই থেকে পেতে চাচ্ছেন,
কোন বার্তাটা ওনার জীবনের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি, কেন তিনি নিজের কষ্টার্জিত অথবা
বাবা-মায়ের উপার্জিত টাকা খরচ করে বই কিনবেন। বইটা নিজের শেলফে যত্ন করে রাখলে
কী উপকার হবে কিংবা বইটা তিনি কাউকে কী কী কারণে রেফার করতে পারবেন।
এরকম প্রত্যেকটা বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা যে ব্যক্তি রাখেন তিনি নিঃসন্দেহে একজন পরিচ্ছন্ন পাঠক।
বর্তমানে বাংলা সাহিত্যে যে সময় যাচ্ছে এই সময়ে একজন পাঠককে পরিচ্ছন মনের অধিকারী হওয়া
আরো বেশি জরুরি।
কারণ বিস্তর বই লেখক-প্রকাশক বের করছেন। কিন্তু আমরা পাঠকরা শত শত বই কিনতে বা পড়তে পারবো না।
শত বই থেকে হয়তো দশটা বই কিনতে পারবো, পড়তে পারবো;
কিন্তু সেই দশটা কেমন হবে সেটা আমাদের জ্ঞান পিপাসু ইচ্ছা এবং বাছাইযোগ্যতার উপর ভিত্তি করে বের
করে নেওয়াটা খুব কঠিন এবং সময়ক্ষেপণকারী।
তাই নিজের অন্তঃকর্ণকে জাগাতে হয়, ভাবতে হয় সময় নিয়ে। কী আমাকে সুন্দরের দিকে ডাকছে ?
আরো পড়ুন:‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ – সুজন দেবনাথ
বই পড়ার উদ্দেশ্য যদি হয় নিজের জীবনকে সুন্দরের দিকে, কল্যাণের দিকে, সততার দিকে ধাবিত করে নিজেকে গঠন করা তাহলে পাঠককে খুব বেছে বেছে কিছু বই পড়তে হবে যেসব বই ধারণা দিবে একজন সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের আচার-আচরণ, জ্ঞান-গরিমা এবং চলার পথের কেমন হওয়া উচিত৷
স্রষ্টা স্বয়ং বলেছেন এমন মানুষের সংসর্গ ত্যাগ করা উচিত যে মানুষকে অবিশ্বাসের দিকে, পাপের দিকে, পঙ্কিলতার দিকে নিয়ে যায়৷ এমন মানুষের আনুগত্য করতেও নিষেধ করা হয়েছে যাদের বহিঃকর্ণ জাগ্রত কিন্তু অন্তঃকর্ণ তালাবদ্ধ! আর যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে, প্রেমের দিকে, মহাজীবনের দিকে আহ্বান করেন তারা সর্বত্র শ্রদ্ধার, সম্মানের, ভালোবাসা পাবার যোগ্য।
তাদের লেখা চাপা পড়তে পড়তে বেরিয়ে আসবে, মহাকাল তাদের লেখার সমাদর করবে, তারা বেঁচে না থাকলেও তাদের লেখা অনন্তকালের দিকে যাত্রা করবে মানব সভ্যতার সাথে সাথে।
মাইগ্রেটরি পাখিদের মত মাইগ্রেটরি বই পড়ুয়ারা হয়তো এসবের কদর বুঝবে না।
কিন্তু যারা সত্যিকারের জ্ঞানের খোরাকের সন্ধান করেন, যুক্তি, প্রেম, শ্বাশ্বত, শুভ্র পথের দিকে ধাবিত হতে চান তারা অবশ্যই এসব খুঁজে বের করে আনবেন।
লেখক বেঁচে না থাকলেও সেই লেখকের লেখা পড়বেন নিজেকে সমৃদ্ধ করবেন।
মানব জীবন: লুৎফর রহমান
➡মার্চের শুরু থেকেই একটু একটু একটু করে বইটির (মানব জীবন) অংশটুকু পড়ছিলাম(অন্য কয়েকটা আগে পড়া হয়েছে) গতকাল পরীক্ষা দিয়ে এসেই বাকিটুকু শেষ করে ফেলেছিলাম।
একজন লুৎফর রহমানের জ্ঞানের পরিধি, বলার ভাষা, বিচক্ষণতা, বিবেচনাবোধ, যুক্তি খন্ডায়ন, চরিত্র চিত্রায়ন, লেখার গভীরতা, মানুষকে জীবন চেনানোর উপায়গুলো দেখে সত্যি অবাক হতে হয়।
এই তো প্রেম, এই তো কল্যাণ, এই তো ভালোবাসা, এই তো জগতের আলো, এই তো তরুণ সমাজের জন্য আর্শীবাদ।
যে বই কাউকে সৎ হতে বলে, দয়ালু হতে বলে, নীতির কথা বলে, সাহসের কথা বলে, নির্ভীক হতে বলে, দায়িত্বের কথা মনে করিয় দেয়, মহান ব্যক্তিদের উদাহরণ টেনে এনে চোখে আঙুল দিয়ে ভালো-মন্দ বুঝিয়ে দেয়, সেই বই- ই তো সত্যিকারের মলাটে ছাপানো বই যা যুগ যুগ ধরে নিজের কাছে রাখা যায়, বারবার পড়া যায়।
একটু একটু করে আত্মস্থ করে নিজেকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে কী কী করতে হবে তা শেখা যায়।
অন্যকে শেখানো যায়, অন্যকে বলা যায়, রেফার করা যায়।
লেখকের জ্ঞানের ভান্ডার দেখে অবাক না হয়ে পারছিনা। ছোট্ট একেকটা অধ্যায়ে তিনি বিভিন্ন দেশের
এত এত মহান মানুষেন উদাহরণ টেনেছেন তা দেখে অবাক হতে হয় এই ভেবে যে তিনি কত বই পড়েছেন,
কত তথ্য উদ্ধার করেছেন, কত অজানা বিষয় এবং মানুষদের নিয়ে ভেবেছেন।
এই প্রবন্ধগুলো লিখতে তিনি কত কষ্ট করেছেন। কত পরিশ্রম দিয়ে নিজের চারপাশের অভিজ্ঞতা, ঘটনা মিলিয়ে এসব বই তিনি লিখেছেন।
আলোর পথের পথ প্রদশর্ক লুৎফর রহমান
সেবার পথে, দানের পথে, সততার পথে, জ্ঞানের পথে কোনো লেখক এমনভাবে
কাউকে ডেকেছেন এরকম লেখা আমি আগে পড়িনি। এরকম লেখক সম্পর্কে
আপনার জানা থাকলে নিচে কমেন্টস করে জানিয়ে দিবেন অনুগ্রহপূর্বক!
বর্তমানে শো-অফ এবং ব্যবসার দুনিয়ায় যা হচ্ছে তা আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি।
এই বইটা লাইব্রেরির কোনো একটা কোণা থেকে আমি উদ্ধার করে এনেছি।
কেনার সময় লাইব্রেরিয়ান একটা ময়লা কাপড় দিয়ে ধুলো মুছে দিয়েছেন।
কেমন অযত্ন -অবহেলায় পড়ে ছিলো এই রত্ন সেটার ব্যখ্যাও তিনি দিয়েছেন।
( আমাকে একজনে রেফার করেছিলো বলে আমি এটা খুঁজতে গিয়েছিলাম)
এই বইগুলোকে ছাপিয়ে বের করার লোক পাবেন না আপনি, বইটার মাঝখানে
কয়েকটা পেইজ নেই, খুব পাতলা পেইজ, বানানে ভুল, অযত্নের স্পষ্ট ছাফ!
ডাঃ লুৎফর রহমান বলেছেন, সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত সাহিত্যের মূল উদ্দেশ্য মানুষের
অন্তরস্থ বিবেককে জাগিয়ে দেওয়া, তেজস্বী, নির্ভীক, পুষ্ট এবং সবল করে তোলা।
বর্তমানে তা আদৌ হচ্ছে কী ?
বই পড়ুন, নিজেকে উন্নত করুন, স্রষ্টার মহিমার কথা নিজ অবস্থান থেকে ভাবুন।
আশপাশের মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার করুন এবং নিজের আত্নাকে বিশুদ্ধ করুন।
# মানব জীবন
লুৎফর রহমান
জেসমিন পমি (প্রমিলা নজরুল)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাণিবিদ্যা
অনার্স-২য় বর্ষ